ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে টাকা আয় করার পদ্ধতিসমুহ
প্রথমেই জানবো ওয়ার্ডপ্রেস কি
ওয়ার্ডপ্রেস হলো একটি CMS (Content Management System) । সহজভাবে বলতে গেলে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট ম্যানেজম্যান্ট সিষ্টেম। কনটেন্ট হলো ওয়েবসাইটের উপাদান। ছবি, লেখা ও যাবতীয় তথ্য আপনি যা একটি ওয়েবসাইটে দেখে থাকেন তাই হলো কনটেন্ট।
এইগুলি ম্যানেজ করাই হলো Content Management. আর ওয়ার্ডপ্রেস হলো এমন একটি কনটেন্ট ম্যানেজম্যান্ট সিষ্টেম। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে বিশ্বের এক নাম্বার CMS. ওয়েবসাইট বানানোর জন্য এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। শিখতে পারলে নিজের আত্নবিশ্বাস ও তুঙ্গে উঠে যাবে। এইবার বুঝেন এইটা শিখা কতটা জরুরি।
আপনি চাইলে এই লিংক থেকে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে বানানো অনেক ওয়েবসাইট দেখে আসতে পারেন।
কেনো আমরা শিখবো
যদি আপনি চান অনলাইন ক্যারিয়ার গড়বেন, তাহলে আপনি যে কোন সেক্টরেই কাজ করেন না কেনো, আপনার ওয়ার্ডপ্রেস শিখা থাকলে তা আপনার জন্য বিশাল এক প্লাস পয়েন্ট। তাছাড়া আপনি যদি ওয়েবসাইট বানাতে চান, তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস শিখার বিকল্প নেই বর্তমান বাজারে।
আর আপনি যদি ওয়েব ডেভেলাপমেন্টে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে ওয়ার্ডপ্রেস শেখা আপনার জন্য বাধ্যতামূলক। আপনি যদি চান শখের বশে শুধু মাত্র একটা সাধারন ওয়েবসাইট বানাবেন, তাহলেও আপনি ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে পারেন। এতে করে আপনাকে অনেক কঠিন কঠিন কোডিং শেখা লাগবে ন। রেডিমেট হাজার হাজার থিম পাওয়া যায় যা দিয়ে আপনি অনাআসেই একটি ওয়েবসাইট বানাতে ও মেইনটেইন করতে পারবেন।
কাদের জন্য উপযুক্ত
যারা কোন ওয়েবসাইট দেখলেই কৌতুহলবশত তা বানাতেও চান তারা এ সেক্টরে বেশ ভালো করে থাক। আমি বরাবরই বলে আসছি যে, প্রত্যেক কাজ করার জন্য আগ্রহের দরকার হয়। তবে যারা কম্পিউটার কোডিং করতে আগ্রহী তারাই এক্ষেত্রে ভালো করতে পারবে। ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলাপমেন্টে প্রোগ্রামিং করতে হয়। যারা কোড দেখতে পছন্দ করেন না তারা এ সেক্টরে না আসাই ভালো।
মার্কেটের চাহিদা কেমন
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা হলো ওয়ার্ডপ্রেস এর। এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই। বিশ্বে প্রতিদিন যত ওয়েবসাইট তৈরি হয় তার বেশিরভাগ তৈরি হয় শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে। তাই আলাদা করে এইটা নিয়ে বর্ননা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
আয় সম্ভাবনা কেমন
ইন্টারন্যাশনাল ষ্টান্ডার্ড অনুযায়ী আপনি এভারেজ মানের একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে ২০০ ডলার থেকে ২০০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ২০০-৫০০ ডলারের মধ্যেই হয়ে থাকে। আর এভারেজ মানের একটি ওয়েবসাইটের কাজ শেষ করতে আপনার সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৩ দিন। তাহলে বলা যেতে পারে যে, আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ভালো জানলে মাসে মাত্র ৩ টি কাজ করলেও ৬০০ ডলার অর্থাৎ ৫০,০০০ টাকা আয় করা খুব একটা কঠিন নয়।
জেনে রাখা ভালো যে, আমি শুধু এভারেজ এর কথা বলেছি। তবে একজন ভালো মানের ওয়ার্ডপ্রেস এক্সপার্ট এর আয় এভারেজ ২ হাজার ডলার প্রতি মাসে। তাছাড়া অনেক সময় ই আপনি টুকটাক সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কাজ পারেন যা করতে হয়তো আপনার মাত্র ১৫ মিনিট লাগবে সবমিলিয়ে কিন্তু আপনার আয় হবে ৩০-১০০ ডলার। এইটি খুব মজার ব্যাপার। তবে ব্যাপার হলো যে, আপনাকে এক্সপার্ট হতে হবে। কোন রকম কাজ শিখে আয় করা সম্ভব নয় এই সেক্টরে।
তাহলে চলুন জেনে নেই শিখতে হলে আপনার কি কি দরকার হবে
আপনাকে সর্বপ্রথম HTML and CSS ভালোমতো শিখতে হবে। আমি আবারো বলছি, আগে HTML and CSS শিখুন। তার পর আপনি ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে আসুন। তা না হলে আপনি ঝামেলায় পড়ে যাবেন। HTML and CSS শিখতে এখানে ক্লিক করুন।
মনে রাখবেন যে, ওয়ার্ডপ্রেস হলো ওয়েব ডেভেলাপমেন্টের আওতাধীন আর HTML and CSS হলো ওয়েব ডিজাইনিং এর আওতাধীন। আচ্ছা, তার পর আপনার দরকার হবে বেসিক PHP দক্ষতা। PHP হলো আরো একটা বেশ জনপ্রিয় ও পাওয়ারফুল ওয়েব প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। অনেক ক্ষেত্রে হয় যে, অনেক নতুন শিক্ষার্থীরা PHP শিখতে বেশ ঝামেলায় পড়ে যায়। তাই আপনার একদম Core PHP জানার দরকার নেই।
আপনার বেসিক Syntex জানলেই চলবে
আর আপনি যখন এডভান্স হবেন, তখন আপনাকে আরো একটি ল্যাংগুয়েজ শিখতে হবে তা হলো Javascript. অত্যান্ত মজাদার একটি ল্যাংগুয়েজ এটি। শেষ কথা হলো যে, আপনাকে HTML, CSS, PHP, শিখতেই হবে। তার মধ্যে PHP বেসিক জানলেও কাজ করা যায়।
আপনি যখন এডভান্স হবেন তখন আপনাকে অবশ্যই Javascript, Jquery, Ajax এই ল্যাংগুয়েজগুলি শিখতে হবে। কাজ করতে করতে যখন আপনি এক্সপার্ট হবেন তখন আপনি সকল ল্যাংগুয়েজই ভালোমতো আয়ত্ব করে নিবেন।
আর হ্যা। আপনাকে অবশ্যই ইংরেজীতে মোটামোটি ভালো দক্ষতা লাগবে। কারন সবকিছু আপনাকে ইংরেজীতেই করতে হবে।তবে খুব বেশি ভালো না হলেও প্রাকটিস করলে আস্তে আস্তে ইংরেজীটা আয়ত্বে এসে যায়। ইংরেজী এতো কঠিন কিছুই নয়।
তাহলে চলুন এইবার জেনে নেই কিভাবে শিখবেন
প্রথমে আপনাকে জানতে হবে ওয়ার্ডওপ্রেস এর সাধারন ফাংশন। অর্থাৎ ওয়ার্ডপ্রেস কিভাবে কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে কোন কোডিং করার ঝামেলা নেই। নিচে দেওয়া লিংক থেকে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস এর বেসিক ব্যবহার জেনে নিতে পারেন।
এখন নিশ্চই আপনি জানেন যে, একটা ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের Theme হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ। অর্থাৎ, একটি থিম এর উপরই মূলত নির্ভর করে যে, আপনার ওয়েবসাইটটি কি রকম দেখতে হবে এবং কোন কোন ফাংশন থাকবে আপনার ওয়েবসাইটে। এবং সকল তথ্যই ডায়নামিক হবে। অর্থাৎ, আপনি Dashboard থেকে আপনি সহজেই সকল কনটেন্ট আপনার ইচ্ছামতো ইডিট করতে পারবেন।
এবার আপনাকে শিখতে হবে যে, একটা HTML টেমপ্লেটকে কিভাবে আপনি ডায়নামিক ভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ফাংশনে রুপান্তরিত করতে পারবেন। মানে হলো যে, আপনার ওয়েবসাইট আগের মতোই দেখাবে কিন্তু আপনি চাইলে, ওয়ার্ডপ্রেসের ড্যাশবোর্ড থেকে একটি নতুন কিছু যুক্ত করলে তা অটোমেটিক আপনার ওয়েবসাইটে যুক্ত হয়ে যাবে। এইটাই হচ্ছে ডায়নামিক। যার বাংলা অর্থ হলো পরিবর্তনশীল। আপনার চাহিদা অনুসারে আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন।
টাকা আয় করার পদ্ধতিসমুহ
১। নতুন ব্লগ তৈরি করে:
আপনি চাইলে নিজের ব্লগিং করার জন্য একটা ব্লগ ডেভেলপ করে টাকা ইনকাম করতে পারেন। এছাড়াও আপনি আপনার ক্লাইন্টদেরকে ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে দিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারেন। আপনার সরাসরি ক্লাইন্ট পেতে সমস্যা হলে আপনি ওডেস্ক, ইলেঞ্চ, ফ্রিলেঞ্চার সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চেস্টা করে দেখতে পারেন।
তবে এই জন্য আপনাকে ফ্রিলাঞ্চিং করার প্রোফাইলটি অনেক সুন্দর করে সাজাতে হবে। আপনি চাইলে এখানে ভালো ফ্রীলাঞ্চিং প্রোফাইল তৈরির টিউটোরিয়াল দেখে আসতে পারেন। আশা করি এই উপায় ব্যবহার করে আপনি ভালো একটা অঙ্কেড় টাকা ইনকাম করত পারবেন।
২। কনটেন্ট তৈরি করে:
আপনি চাইলে কনটেন্ট তৈরি করে এবং সেল করে ভালো অঙ্কের টাকা আয় করতে পারবেন। আপনি এই ধরনের কনটেন্ট তৈরির অসংখ্য জব ফ্রিলাঞ্চিং সাইটে পাবেন। এছাড়া আপনি এই সকল কনটেন্টসমুহ আপনি আপনার নিজস্ব ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে ব্যবহার করে অ্যাডসেন্স অথবা অন্ন কোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা ইনকাম বা আয় করতে পারেন।
৩। থিম আর প্লাগইন ডেভেলপ করে:
আপনি যদি কোডিং-এ এক্সপার্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কোডিং-এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্লাগইন এবং থিম তৈরি এবং বিক্রয় করে টাকা আয় করতে পারেন। আপনার এই সকল ডেভেলপমেন্ট আপনি ওয়ার্ডপ্রেস, থিমফরেস্ট সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট বিক্রয় করতে পারেন। এছাড়া আপনি আপনার ক্লাইন্টের চাহিদামতো ডেভেলপমেন্ট করে দিয়েও টাকা ইনকাম করতে পারেন।
৪।ক্লাইন্টের ওয়েবসাইটের সমস্যা সমাধান করে:
ক্লাইন্টের ওয়েবসাইটের কোন সমস্যা হলে সেই সমস্যা ফিক্স করে বা সমাধাক করেও চলারমতো টাকা আয় করতে পারেন। তবে এই ধরনের কাজ আপনি প্রচুর পরিমানে পেতে পারেন। এই জন্য আপনাকে ফ্রিলাঞ্চিং ওয়েবসাইট এ আপনাকে একটিভ থাকতে হবে।
আর সব শেষে একটা কথাই বলতে চাই, আপনি যেই কাজটাকেই প্রফেশন হিসাবে নিবেন সেই কাজের সন্মান করবেন আর সবসময় ওটার সাথেই লেগে থাকার চেস্টা করবেন। এতে আপনি নতুন অনেক কিছুই শিখতে পারবেন যা পরবর্তীতে অনেক উপকার করবে।
0 Comments
Please Don't Send Any Spam Link